শীতকালে নিজের শরীরের বেশি যত্ন নেওয়া
প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়া উচিত এই মৌসুমে। বাইরে থেকে যত্নের পাশাপাশি চাই
ভেতর থেকে সুস্থতা। শীতে কিছু ফল আপনাকে সজীবতা ও সুস্থতা দেবে। ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ এসব ফল
শীতে খসখসে হয়ে যাওয়া ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। আর তাই সুযোগমতো এসব ফল খেতে ভুলবেন
না। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
শরীরে ফাইবার বা আঁশের ঘাটতি মেটাতে ও
ভিটামিন ‘সি’র জোগান দিতে
শীতের সময় বেশি করে এসব ফল খেতে পারেন। জেনে নিন এ মৌসুমের দারুণ পাঁচটি ফল ও এর পুষ্টিগুণ
সম্পর্কে:
পেয়ারা
শীতের মৌসুমে বাজারে পেয়ারা পাবেন। স্বাস্থ্য
সুরক্ষার জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেয়ারা রাখা যেতে পারে। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,
ভিটামিন ‘সি’ ও লাইকোপেন,
যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারি। পেয়ারার বিশেষ পাঁচটি গুণের মধ্যে রয়েছে এটি ডায়াবেটিসের
জন্য উপকারী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চোখের জন্য ভালো, পেটের জন্য উপকারী আর ক্যানসার
প্রতিরোধী। পেয়ারা অনেক ধরনের সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে। পেয়ারাতে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়, যা
কমলালেবুর চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। পেয়ারায় আছে ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন
‘বি’ কমপ্লেক্স। এতে
আছে যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড ও
নিকোট্রিন অ্যাসিড। বয়সের সঙ্গে জড়িত নানা রোগ, যেমন- স্মৃতিভ্রংশ (আলঝেইমার), চোখে
ছানি, আরথ্রাইটিস বা হাঁটুব্যথা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
কমলালেবু
শীতকালে অন্যতম ফল কমলা লেবু। এতে রয়েছে
ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম। এই ফল অনেক ধরনের সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য
করে। বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে কমলায়। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, সর্দি-কাশি
সারায়, মানসিক অবসাদ দূর করে। জ্বর ও ফ্লুর সময় কমলা খাওয়া ভালো। কোয়ার পাতলা ত্বকে
আঁশ আছে বলে কোষ্ঠকাঠিন্যও কমাবে। কমলার রসে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ও ক্যালসিয়াম
আছে। রক্তশূন্যতা ও জিবের ঘা সারাতেও কমলা উপকারী।
আনার
শীতকালে প্রচুর পরিমাণে আনার খাওয়া উচিত।
এটি রক্তচাপ নিরাময়ে সাহায্য করে। একইসঙ্গে হার্টকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। শরীর
সুস্থ রাখার পাশাপাশি জীবনের সজীবতা ধরে রাখতে আনারের ভূমিকা অতুলনীয়। এক গ্রাম আনারের
জুসে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে
হার্টকে ঝুঁকিমুক্ত রাখে। ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। আনারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ক্যানসার সেল তৈরী ও বেড়ে ওঠাকে বাধা দান করে। ফলে ক্যানসার প্রতিরোধে আনার বেশ কার্যকর।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: আনারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ রয়েছে। এই দুইটি
ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক।।
কলা
শীতকালে কলাও প্রচুর পরিমাণে খাওয়া উচিত।
কলা যেমন পুষ্টিকর, তেমনই সুস্বাদু। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড় মজবুত
করতে সাহায্য করে। পরিপাক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু
গঠনকারী উপদান যথা আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। কলা ক্যালরির একটি ভাল উৎস। এতে কঠিন খাদ্য
উপাদান এবং সেই সঙ্গে পানি জাতীয় উপাদান সমন্বয় যে কোনো তাজা ফলের তুলনায় বেশি।
কলা যখন অতিরিক্ত পেকে যায় এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন
রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলা শরীরে শক্তি
যোগায় এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। অধিক ক্যালরি সম্পন্ন খাবারের
বিকল্প হিসেবে কলা খাওয়া হলে তা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। মাঝারি আকৃতির একটি কলায়
মাত্র ১০৫ ক্যালরি থাকে। এছাড়াও কলাতে রয়েছে ক্রোমিয়াম নামক খনিজ পদার্থ, যা বিপাক
ক্রিয়ায় সহায়তা করে।
আপেল
সুস্থ থাকতে ডাক্তারের কাছে যাওয়া থেকে
দূরে রাখে প্রতিদিন একটি আপেল খেলে। কারণ আপেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
মহামারির সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রত্যেকেরই পরম বন্ধু। এখানেও পর্দার আড়ালে কাজ
করে ‘কোয়েরসেটিন’ যা প্রদাহ কমাতেও
সহায়ক হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে একটি করে আপেল
খেলে রক্তের ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমে যায় ও উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ে।
আপেলে শর্করা, চিনি, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি, লোহা ও ম্যাগনেশিয়াম
আছে। এটি রক্তচাপ ও রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই হৃদ্রোগী ও ডায়াবেটিস রোগীরা আপেল
খেলে উপকার পাবেন। এটি হজমের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে সাহায্য করে। হজমশক্তিও
বাড়ায়। আপেলের খোসায় পলিফেনলস নামে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে,
যা শরীরের কোষ রক্ষা করে। আপেল শরীরের জ্বালা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি ভিটামিন
সি, ফাইবারের অন্যতম উৎস।