Logo
শিরোনাম

বাগেরহাটে একযুগ ধরে খোলা নেই কোনো সিনেমা হল

প্রকাশিত:বুধবার ০৩ আগস্ট ২০২২ | হালনাগাদ:শনিবার ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ৯৮০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

একসময় বাগেরহাটে বিনোদনের একমাত্র উৎস ছিল মনিকা ও লাইট নামের দুটি সিনেমা হল। সেই পাকিস্তান আমল থেকে চলা এই হলগুলো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে প্রায় একযুগ ধরে বন্ধ। শুধু তাই নয়, বর্তমানে হল দুটি ব্যবহৃত হচ্ছে রিকশা চার্জ ও ভাঙারি জিনিসপত্র রাখার স্থান হিসেবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হল দুটির পর্দা, চেয়ার, দেয়ালে ছবির পোস্টার, লাইট সবই জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে আছে। একসময় সেখানে অনেকগুলো দোকান ছিল। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রদর্শিত হতো সিনেমা। টিকিটের জন্য দেখা যেত দীর্ঘ লাইন। হলে দর্শক টানতে করা হতো মাইকিং। এখন আর সেই পরিচিত দৃশ্য দেখা যায় না। বর্তমানে এই এলাকায় কোনো কোলাহল নেই। সিনেমার সংলাপ উড়ে বেড়ায় না। শুধু সুনশান নীরবতা। বাগেরহাটবাসীর প্রত্যাশা, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে হল দুটি ফের চালু করা হোক। আবারও ফিরে আসুক সুস্থ ধারার বিনোদন।

লাইট হলের সেই সময়ের টিকিট বিক্রেতা ইলিয়াস মোল্লা বলেন, আমরা আরও ৮-১০ জন লোক একসঙ্গে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করতাম। হলের সামনের রাস্তায় সিনেমাপ্রেমী মানুষের উপচে পরা ভিড়ে হাঁটতে পারতাম না। টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন থাকতো। এখন হল বন্ধ থাকায় অনেকে বেকার হয়ে গেছেন। অনেকে ঢুকেছেন বিকল্প পেশায়। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আবারও হলদুটি চালু করা হোক। হলের সামনের দোকানি আবু তালেব বাচ্চু বলেন, আমি এখানে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে দোকান চালাচ্ছি। আমি লাইট এবং মনিকা হলের যৌবন দেখেছি। আগে বিনোদনের একমাত্র কেন্দ্র ছিল এই দুটি হল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ সিনেমা দেখতে আসতো। সিনেমা দেখে অনেকে আবেগে কান্না করতো। অনেকে ভিলেনকে গালি দিতে দিতে বের হতেন।

স্থানীয় যুবক ওবায়দুল্লাহ আল ইমন বলেন, বিনোদন আমাদের অধিকার। তবে সেই অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা বাবা-মায়ের কাছে শুনেছি তারা পরিবারের সবাইকে নিয়ে শাবানা-আলমগীরের সিনেমা দেখতে যেতেন। বর্তমানে আমাদের মোবাইল ছাড়া বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা সিনেমা দেখার বাঙালি সংস্কৃতি থেকে সরে আসছি। ঝুঁকে পরছি বিদেশি সংস্কৃতির দিকে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত সিনেমা হলগুলো চালু করে।

বাগেরহাট থিয়েটারের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আজমল হোসেন বলেন, বাগেরহাটবাসীর বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই দুটি হল বন্ধ রয়েছে। সরকার যদি অনুদানের মাধ্যমে এসব হল আবারও খোলার ব্যবস্থা করে তাহলে এই অঞ্চলের মানুষ আবার সিনেমা দেখার সুযোগ পাবে। বাগেরহাট গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি সৈয়দ শওকত হোসেন বলেন, বাগেরহাটের ঝিমিয়ে পরা সিনেমা হলগুলো প্রয়োজনে সরকারি প্রণোদনা দিয়ে চালু করতে হবে। এ জন্য আমি স্থানীয় প্রশাসনসহ ব্যক্তি পর্যায়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

বাগেরহাটের স্থানীয় ভাষায় নির্মিত সাহস সিনেমার নায়ক মোস্তাফিজুর নুর ইমরান বলেন, আমি বাগেরহাটের মানুষ, কিন্তু হল না থাকায় এখানকার মানুষকে আমার সিনেমা দেখাতে পারিনি। আমি মনে করি বাগেরহাটে একটি সিনেপ্লেক্স তৈরি করা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও এগিয়ে আসা দরকার। তাহলে মানুষ আবারও সিনেমা হলে আসবে এবং ভালো সিনেমা দেখতে পাবে। তাদের বিনোদনের চাহিদা পূরণ হবে।

নিউজ ট্যাগ: বাগেরহাট

আরও খবর