বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ সংসদে ০৮ জুলাই, ২০১২ তারিখে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে মোট ১৩০৭টি প্রাণি ও উদ্ভিদকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই আইনের ৩৬ ধারা অনুযায়ী বাঘ বা হাতি হত্যা করলে ২-৭ বছর কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে ১২ বছরের কারাদণ্ড ও ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে। আইনের ৩৭ ধারা অনুযায়ী চিতা বাঘ, লামচিতা, উল্লুক, সাম্বার হরিণ, কুমির, ঘড়িয়াল, তিমি বা ডলফিন হত্যা করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এই আইনের ৩৮ ধারা অনুযায়ী পাখি বা পরিযায়ী পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। আইনে আরো বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি কারো কাছ থেকে বন্য প্রাণি, বন্য প্রাণির কোনো অংশ, মাংস, ট্রফি বা কোনো দ্রব্য কিনলে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে।
এই আইনে আরো বলা হয়েছে, সরকারি বন, বনের অংশ, সরকারি ভূমি, জলাভূমি বা যে কোনো এলাকাকে গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা যাবে। অভয়ারণ্যে কেউ চাষাবাদ, শিল্পকারখানা স্থাপন, উদ্ভিদ আহরণ ও ধ্বংস এবং অভয়ারণ্যে কেউ অগ্নিসংযোগ করতে পারবে না। এ সম্পর্কিত বিধিনিষেধ কেউ লঙ্ঘন করলে দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
এই আইনের ৮টি ধারা নিচে প্রদান করা হলোঃ
ধারা ৩৪ কোন ব্যক্তি যদি-
(ক) ধারা ১১ এর বিধান অনুযায়ী নিবন্ধিত এবং প্রদত্ত নিবন্ধন চিহ্ন নকল, বিনিময় অথবা অন্য কোনভাবে হস্তক্ষেপ বা পরিবর্তন করেন; বা
(খ) লাইসেন্স অথবা পারমিট প্রাপ্ত কোন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কাহারো নিকট হইতে কোন বন্যপ্রাণী, বন্যপ্রাণীর কোন অংশ, মাংস, ট্রফি অথবা উহা হইতে উৎপন্ন দ্রব্য বা বনজদ্রব্য বা তফসিল ৪ এ উল্লিখিত উদ্ভিদ অথবা উহা হইতে উৎপন্ন দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয় বা আমদানি-রপ্তানি করেন- তাহা হইলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ৩ (তিন) বৎসর পর্যন্ত করাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ২ (দুই) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা ৩৫। কোন ব্যক্তি ধারা ১৪ এ উল্লিখিত কোন নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন ও উক্তরূপ অপরাধের জন্য জামিন অযোগ্য হইবেন এবং তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৪ (চার) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা ৩৬। (১) কোন ব্যক্তি ধারা ২৪ এর অধীন লাইসেন্স গ্রহণ না করিয়া তফসিল ১ এ উল্লিখিত কোন বাঘ বা হাতি হত্যা করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন ও উক্তরূপ অপরাধের জন্য জামিন অযোগ্য হইবেন এবং তিনি সর্বনিম্ন ২ (দুই) বৎসর এবং সর্বোচ্চ ৭ (সাত) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ১ (এক) লক্ষ এবং সর্বোচ্চ ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দডণ্ডত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ১২ (বার) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১৫ (পনের) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেনঃ
তবে শর্ত থাকে যে, বাঘ বা হাতি কর্তৃক কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হইলে এবং উহার ফলে তাহার জীবনাশঙ্কার সৃষ্টি হইলে জীবন রক্ষার্থে উক্ত আক্রমণকারী বাঘ বা হাতিকে হত্যার ক্ষেত্রে এই ধারার বিধান প্রযোজ্য হইবে নাঃ
তবে আরো শর্ত থাকে যে, এ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন মামলা দায়েরের প্রশ্ন দেখা দিলে, সংশ্লিষ্ট স্টেশন কর্মকর্তা ওয়ার্ডেন এর সহিত পরামর্শক্রমে মামলা দায়ের করিতে পারিবেন।
(২) কোন ব্যক্তি ধারা ১০ এর অধীন পারমিট গ্রহণ না করিয়া তফসিল ১ এ উল্লিখিত কোন বাঘ বা হাতির ট্রফি, অসম্পূর্ণ ট্রফি, মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করিলে, দখলে রাখিলে বা ক্রয় বা বিক্রয় করিলে বা পরিবহন করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৩ (তিন) বৎসর পর্যন্ত করাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩ (তিন) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা ৩৭। (১) কোন ব্যক্তি তফসিল ১ এ উল্লিখিত কোন চিতা বাঘ, লাম চিতা, উল্লুক, সাম্বার হরিণ, কুমির, ঘড়িয়াল, তিমি বা ডলফিন হত্যা করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৩ (তিন) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩ (তিন) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেনঃ
তবে শর্ত থাকে যে, চিতা বাঘ বা কুমির কর্তৃক কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হইলে এবং উহার ফলে তাহার জীবনাশঙ্কার সৃষ্টি হইলে জীবন রক্ষার্থে উক্ত আক্রমণকারী চিতা বাঘ বা কুমিরকে হত্যার ক্ষেত্রে এই ধারার বিধান প্রযোজ্য হইবে নাঃ
তবে আরো শর্ত থাকে যে, এ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন মামলা দায়েরের প্রশ্ন দেখা দিলে, সংশ্লিষ্ট স্টেশন কর্মকর্তা ওয়ার্ডেন এর সহিত পরামর্শক্রমে মামলা দায়ের করিতে পারিবেন।
(২) কোন ব্যক্তি তফসিল ১ এ উল্লিখিত কোন চিতা বাঘ, লাম চিতা, উল্লুক, সাম্বার হরিণ, কুমির, ঘড়িয়াল, তিমি বা ডলফিন এর ট্রফি বা অসম্পূর্ণ ট্রফি মাংস দেহের অংশ সংগ্রহ করিলে, দখলে রাখিলে বা ক্রয় বা বিক্রয় করিলে বা পরিবহন করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ৪ (চার) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা ৩৮। (১) কোন ব্যক্তি তফসিল ১ ও ২ এ উল্লিখিত কোন পাখি বা পরিযায়ী পাখি হত্যা করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(২) কোন ব্যক্তি তফসিল ১ ও ২ এ উল্লিখিত কোন পাখি বা পরিযায়ী পাখির ট্রফি বা অসম্পূর্ণ ট্রফি, মাংস দেহের অংশ সংগ্রহ করিলে, দখলে রাখিলে বা ক্রয় বা বিক্রয় করিলে বা পরিবহন করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩০ (ত্রিশ) হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা ৩৯। কোন ব্যক্তি ধারা ৬, ১০, ১১ বা ১২ এর বিধান লংঘন করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা ৪০। কোন ব্যক্তি ধারা ২৪ বা ২৭ এর বিধান লংঘন করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা ৪১। কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করিলে বা উক্ত অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা প্রদান করিলে এবং উক্ত সহায়তা বা প্ররোচনার ফলে অপরাধটি সংঘটিত হইলে, উক্ত সহায়তাকারী বা প্ররোচনাকারী তাহার সহায়তা বা প্ররোচনা দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।