প্রতি বারই বিশ্বকাপ
জন্ম দেয় কোনও না কোনও নতুন তারকার। কাতার বিশ্বকাপও তার ব্যতিক্রম নয়। এই বিশ্বকাপেও
দেখা গিয়েছে কিছু উদীয়মান ফুটবলারকে। তেমনই নজর কেড়েছেন অভিজ্ঞ ফুটবলাররা, যাঁদের
বিশ্বকাপের আগে কেউ চিনতেন না।
কাতার বিশ্বকাপে
বেশ কিছু অঘটন দেখা গিয়েছে। সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার হার, জাপানের কাছে স্পেন
এবং জার্মানির হার বা মরক্কোর সেমিফাইনালে ওঠা, অনেক কিছুই রয়েছে সেই তালিকায়।
প্রতিটি ম্যাচই
তুলে এনেছে কোনও না কোনও তারকাকে। সে রকমই দশ ফুটবলারের সন্ধান করল আনন্দবাজার অনলাইন,
যাঁদের নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্লাবের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়তে পারে।
ইয়াসিন বুনু (মরক্কো এবং সেভিয়া): গোলকিপার হিসাবে
তিনি এ বারের বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা। মরক্কো সেমিফাইনালের আগে আত্মঘাতী বাদে একটিও
গোল খায়নি। তাঁর অনেকাংশে দায়ী বুনু। অবিশ্বাস্য কিছু সেভ করেছেন। স্প্যানিশ লিগে দীর্ঘ
দিন খেলছেন সেভিয়ায়। এ বার তাঁকে বড় ক্লাবগুলি কিনতে পারে।
ডমিনিক লিভাকোভিচ (ক্রোয়েশিয়া এবং ডায়নামো জাগ্রেব): দেশের বাইরে
আজ পর্যন্ত খেলেননি। ফলে কেউ তাঁকে এত দিন চিনতেও পারেননি। বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে একার
হাতে ব্রাজিলকে হারান। তার আগের ম্যাচে জাপানের বিরুদ্ধে তিনটি সেভ। লিভাকোভিচকে নিয়ে
ইউরোপে কাড়াকাড়ি হলে অবাক হওয়ার নেই।
রিৎসু দোয়ান (জাপান এবং ফ্রেইবুর্গ): জাপানি ফুটবলারদের
গতি এ বার নজর কেড়েছে। প্রতিটি ম্যাচে বলের পিছনে অনবরত দৌড়ে গিয়েছেন তাঁরা। তাঁদেরই
একজন দোয়ান। জার্মানির ঘরোয়া লিগে খেলেন। জার্মানি এবং স্পেনকে হারাতে তাঁর ভূমিকা
অস্বীকার করার জায়গা নেই। জার্মান লিগ থেকে কি স্পেন বা ইংল্যান্ড পরবর্তী গন্তব্য
হতে পারে?
আজ্জেদিন ওউনাহি (মরক্কো এবং অ্যাঙ্গার্স): মেসি, এমবাপে,
নেইমার যে লিগে খেলেন, সেই ফরাসি লিগে এই মুহূর্তে সবচেয়ে নীচে থাকা ক্লাবের ফুটবলার
ওউনাহি। বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দেখে কে সেটা বলবে? স্পেন এবং পর্তুগালকে থামিয়ে দিয়েছেন
দুরন্ত ফুটবল খেলে। বিপক্ষের মিডফিল্ড তছনছ করেছেন। ভবিষ্যতে তাঁর গন্তব্য পিএসজি কি
না, সময়ই বলবে।
গনসালো রামোস (পর্তুগাল এবং বেনফিকা): সুইজারল্যান্ডের
বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে নেমে আবির্ভাবেই হ্যাটট্রিক! তা-ও আবার প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের
মতো ম্যাচে। পর্তুগাল পরের ম্যাচে বিদায় নিলেও নজর কেড়েছেন রামোস। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর
মতোই ধারাবাহিক ভাবে গোল করার ক্ষমতা রাখেন। ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলি তাঁকে নিতে চাইছে।
সোফিয়ান আমরাবাত (মরক্কো এবং ফিয়োরেন্টিনা): ইটালীয় লিগে
খেলেন বটে, তবে ফিয়োরেন্টিনার মতো মধ্যমানের ক্লাবের খেলা আর কে-ই বা দেখে? আমরাবাত
বিশ্বকাপে নিজের জাত চিনিয়ে দিলেন। বিপক্ষের ডিফেন্স চিরে তাঁর দৌড়, কঠিন পরিস্থিতিতে
মাথা ঠান্ডা রাখা এবং অনবরত আক্রমণ করে যাওয়া নজর কেড়েছে। জুভেন্টাস বা এসি মিলান
তাঁকে নিতে পারে। আসতে পারেন স্পেনেও।
হ্যারি সাউটার (অস্ট্রেলিয়া এবং স্টোক সিটি): বিশ্বকাপের আগেই
হাঁটুর বড় চোট সারিয়ে ফিরেছিলেন। গত ১২ মাসে স্টোক সিটির হয়ে মাত্র একটি ম্যাচে খেলেছেন।
কিন্তু বিশ্বকাপের জন্য নিজের সেরাটা তুলে রেখেছিলেন। রক্ষণে অসাধারণ খেলে দলকে শেষ
ষোলোয় তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ইপিএলের বড় কোনও ক্লাবে যেতেই পারেন।
এনজো ফের্নান্দেস (আর্জেন্টিনা এবং বেনফিকা): এ বারের বিশ্বকাপের
সেরা উদীয়মান তারকা। তাঁকে ঘিরে যে সবচেয়ে বেশি নজর থাকবে ট্রান্সফার উইন্ডোতে, তা
নিয়ে সন্দেহ নেই। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত একটি গোল করেছেন। সাতটি ম্যাচেই ভাল খেলেছেন।
নজর কেড়েছেন প্রতি ম্যাচে। লিয়ো মেসির পছন্দের ফুটবলার। তাঁকে ইপিএলের কোনও ক্লাব
নিতে পারে।
মোহাম্মাদ কুদ্দুস (ঘানা এবং আয়াক্স): আফ্রিকা থেকে
তরুণ প্রতিভা তুলে আনার ব্যাপারে আয়াক্সের জুড়ি নেই। নেদারল্যান্ডসের ক্লাবটি এ বারও
বিশ্বকাপে উপহার দিয়েছে মোহাম্মাদ কুদ্দুসকে। তিন ম্যাচে দু’গোল করেছেন। গ্রুপ থেকে ঘানা বিদায় নিলেও
নিজের ছাপ রেখে গিয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব তাঁকে নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছে।
সোফিয়ান বৌফাল (মরক্কো এবং অ্যাঙ্গার্স): স্বদেশি ওউনাহির
মতো তিনিও খেলেন ফরাসি লিগের অ্যাঙ্গার্সে। তবে স্পেন এবং পর্তুগালের বিরুদ্ধে যে খেলা
দেখিয়েছেন, তাতে আগামী দিনে ইউরোপের বড় কোনও ক্লাব তাঁকে তুলে নিতে পারে। পায়ে অসম্ভব
ভাল কাজ রয়েছে। অনায়াসে ড্রিবলিং করতে পারেন।
সালেম আলদাওসারি (সৌদি আরব এবং আল হিলাল): দেশের ক্লাবেই
খেলেন তিনি। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে দুরন্ত বাঁকানো শটে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন। এশিয়ার
বাইরে পা রাখতে চাইলে অনেক ক্লাবই তাঁকে নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতে পারে। মাঝমাঠের অন্যতম
স্তম্ভ তিনি। অনায়াসে তৈরি করতে পারেন আক্রমণ।