ঢাকায় বসবাস
করা মানুষ ঈদের পরদিনও গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন। কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে কেউ আবার একাই
ব্যাগ বস্তা নিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন। ফলে বেশিরভাগ জায়গা ফাঁকা থাকলেও গাবতলী গুলিস্তান,
মহাখালী, সায়েদাবাদ এলাকায় মানুষের ভিড় আছে।
সোমবার (১১ জুলাই)
সকাল থেকে এসব এলাকা থেকে বিভিন্ন রুটে যাওয়া যাত্রীদের নিয়ে চলা যানবাহনের কারণে কিছুটা
যানজটও দেখা দিয়েছে। গণপরিবহনে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় কোনো কোনো পরিবহন বাড়তি ভাড়া
আদায় করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার সরেজমিন
দেখা গেছে, ঈদের আগে সুবিধামত টিকিট না পাওয়ায় অনেকে ঈদের পরদিন বাড়ি যাওয়ার জন্য
পরিবারসহ গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। নির্ধারিত স্থানের টিকিট সংগ্রহ করে বাসের জন্য
অপেক্ষা করছেন। টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় কেউ কেউ নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে অতিরিক্ত
ভাড়া নিচ্ছে। তবে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় দূরপাল্লার বাসগুলো খুব বেশি বিলম্ব করে
ছাড়ছে না বলে জানা গেছে।
আবার গুলিস্তানের
পীর ইয়ামিনি মার্কেটের উল্টো পাশ দিয়ে ফুলবাড়িয়ার পর পর্যন্ত পূর্বপাশের রাস্তায় তীব্র
যানজট। এই পাশে ঢাকা-মাওয়া রুটের গাড়ি বেশি দেখা গেছে। এছাড়া ঢাকা দোহার, নবাবগঞ্জ
এলাকার গাড়িতেও যাত্রী চাপ দেখা গেছে এই এলাকায়।
অন্যদিকে চাঁদপুরসহ
দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ ঢাকা ছাড়ার কারণে সদরঘাট এলাকায়ও লঞ্চের যাত্রীদের
চাপ বেড়েছে। অনেককে একাধিক বড় বড় ব্যাগ, অন্যন্য সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ি যেতে দেখা গেছে।
দক্ষিণবঙ্গে চলাচলা
করা হানিফ এন্টারপ্রাইজের সাব্বির জানান, ঈদের আগে যারা যেতে পারেনি তারা ঈদের পরদিন
বাড়ি যেতে টিকিটের জন্য আসছেন। অনেকেই কাজে ব্যস্ততা থাকায় তারা এখন বাড়ি যাচ্ছেন।
যাত্রীর চাপ থাকায় প্রতি এক ঘণ্টা পরপর তারা গাড়ি ছাড়ছেন। সকাল থেকে দুপুর ১২টা
পর্যন্ত ১৮টি দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে
সূর্যমুখী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মিন্টু বলেন, দেশের বাড়িতে যেতে সকাল থেকে
অতিমাত্রায় যাত্রী আসছেন। সে কারণে কাউকে কাউকে সুবিধামতো টিকিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে
না। যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় সকাল থেকে ৮টি বাস ছাড়া হয়েছে। তবে আগামীকাল থেকে এ
ভিড় কমে যাবে বলে জানান তিনি।
উত্তরা এয়ারপোর্ট
থেকে সকাল সকাল গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন শিক্ষার্থী আল মামুন। দেরি করে ছুটি হওয়ায়
আজ সাতক্ষীরা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। মামুন জানান, সকাল সকাল গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে
আসলেও টিকিটের দাম বেশি চাওয়ায় কয়েকটি কাউন্টার ঘুরে বেশি দামেই নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, অন্যান্য
সময় সাতক্ষীরা যেতে ৫০০-৫৫০ টাকা নেওয়া হলেও বর্তমানে ৮০০ টাকা টিকিটের দাম নেওয়া
হচ্ছে। কম না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বেশি দামে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়েছে। তার মতো এমন
অনেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন।
সাতক্ষীরা রোডে
চলাচলরত এ লাইন পরিবহনের তরিকুল ইসলাম জানান, যাত্রীর চাপ বেশি থাকলেও তাদের পরিবহনের
সংখ্যা কম থাকায় সকাল থেকে দুটি বাস ছাড়া হয়েছে। তবে বিআরটির নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত
আদায় করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে ঈদের পরও
যারা ঢাকা ছাড়ছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই নিম্নআয়ের। এদের অনেকে কোরবানির দিন
(রোববার) বাড়তি আয়ের জন্য গরু কাটাকাটির কাজ করেছেন। দিনভর কাজ করে অনেকেই বেশ ভালো
আয় করেছেন। তাই সবার ঈদ শেষ হওয়ার পর তারা গ্রামে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে ঢাকা
ছেড়ে যাওয়াদের মধ্যে অনেক নারীদেরও দেখা গেছে। ঈদের দিনে অনেক নারীদেরও বাসা বাড়িতে
বাড়তি কাজ করতে হয়েছে। পশু কাটাকাটির সময় পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মাংস কাটতে সহযোগিতা
করেছেন। তাদেরও অনেকে বাড়ি যাচ্ছেন। অনেকের হাতে মাংসের ব্যাগও দেখা গেছে। কেউ আবার
পাতিলে মাংস রান্না করেও নিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে ঈদের দ্বিতীয়
দিনেও ঢাকায় অনেকে কোরবানি দিচ্ছেন। বিশেষ করে পুরান ঢাকার অনেক বাড়ির সামনে গরু কোরবানি
করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে ঢাকার সড়কে ঈদের দিনে যাত্রী সংকট থাকলেও সোমবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন দেখা গেছে। বেশিরভাগ গাড়িতে যাত্রী রয়েছে বেশ ভালোই। যাদের অনেকেই আত্মীয় স্বজনদের বাসা বাড়িতে, ফাঁকা ঢাকায় ঘুরে বেড়াতে বের হয়েছেন।