Logo
শিরোনাম

‘গলুই’ প্রদর্শনী বন্ধ করায় প্রতিবাদের ঝড়

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১০ মে ২০২২ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৩ নভেম্বর 20২৩ | ৮৮৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

ঈদ উপলক্ষে দেশব্যাপী মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান ও পূজা চেরি অভিনীত সিনেমা গলুই’। এটি নির্মাণ করেছেন এস এ হক অলিক। মুক্তির পর থেকে দর্শকের দারুণ সাড়া পাচ্ছে সিনেমাটি। বিশেষ করে জামালপুরে গলুই’ নিয়ে দর্শকের আগ্রহ একটু বেশিই। কেননা সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল এই জেলার বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু এখানে কোনো সিনেমা হল নেই। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেলার শিল্পকলা একাডেমি ও দুটি অডিটোরিয়ামে গলুই’ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।

ঈদের দিন থেকেই তিনটি স্থানে গলুই’ দেখার জন্য বিপুল দর্শকের সমাগম হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ পড়ল ছেদ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জামালপুর শিল্পকলা একাডেমিতে সিনেমাটির প্রদর্শনী। জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামানের নির্দেশেই এমনটা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে নির্মাতা এস এ হক অলিক বলেন, ১৯১৮ সালের এক আইনে বলা আছে, সিনেমা হল ছাড়া অন্য কোনো জায়গায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সিনেমা চালানো যাবে না। এ কারণে গলুই’ প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছেন ডিসি। আমি তাকে বারবার ফোন করেছি, কিন্তু রিসিভ করছেন না। বিষয়টি নিয়ে আমরা তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করব।”

এদিকে গলুই’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সিনে পাড়ার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেক নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলী সামিল হয়েছেন প্রতিবাদে। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, দেখেন আমাদের এটাই প্রাপ্য। কারো সিনেমা আটকানো হলে আমরা বাকিরা যখন সেটা উপভোগ করি, রসালো গল্প তৈরি করে অনলাইনে ছাড়ি, তখন নানারকম বিধি নিষেধের গিলোটিন আমাদের ওপর নাজিল হবে না কাদের ওপর হবে? আমরা যখন এইসব করে বেড়াবো, ঠিক ঐ অবসরেই আইন করা হবে যে, ডিসি চাইলে এমন কি সেন্সর পাওয়া ছবিও আটকে দেয়া যাবে। বাই দ্য ওয়ে, জামালপুরের সিনেমার প্রদর্শনী কিন্তু কনটেন্টের জন্য বন্ধ করা হয় নাই। করা হইছে সিনেমা হলের বাইরে দর্শনীর বিনিময়ে সিনেমা দেখানোর অপরাধে। কিন্তু ডিসি চাইলে কনটেন্টের জন্যও সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ করতে পারেন, এমনকি সেন্সর হওয়ার পরও। নতুন নীতিমালাতে এটা ছাড়াও আরও ভয়াবহ আইন আছে।’

ফারুকী আরও লিখেছেন, সুতরাং শিল্পীর স্বাধীনতা বিষয়ে আপনি মনে মনে অনেক কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন। বাস্তবে আপনার হাত পা পুরাই বাঁধা! এই বিষয়ে সরকারের সাথে আমরা আমাদের নেগোসিয়েশন যথাযথ করতে পারি নাই। কেনো পারি নাই এটা সবাই নিজেদের প্রশ্ন করলে উত্তর পাইয়া যাবেন। এখন তাই কেবল নির্দোষ প্রেমের গল্প ছাড়া আপনার হাতে বানানোর মতো আর কিছু নাই। সেই নির্দোষ প্রেমের গল্পও অবশ্য ব্যান খাইতে পারে সামাজিক মূল্যবোধে আঘাত করার জন্য। যেরকম আমার থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ আর ব্যাচেলর’ খাইছিলো কয়েক মাসের জন্য।”

নির্মাতা মুস্তাফিজুর রহমান মানিক লিখেছেন, হল সংকটের এই সময়ে, সিনেমা হল ব্যাতিত অন্য কোথাও বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা প্রদর্শন করা যাবে না’- এই আইন রহিত করা হোক। জামালপুরের অডিটোরিয়ামগুলোতে, গলুই’ প্রদর্শন বন্ধ করার প্রতিবাদ জানাই।”

নির্মাতা অপূর্ব রানা ফেসবুকে লিখেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র গলুই’-এর প্রদর্শনী বন্ধ করেছেন জামালপুরের ডিসি মহোদয়! করতেই পারেন সেটা তার নীতিমালার মধ্যে পড়লে। আমার ব্যক্তিগত কথা হলো- ঈদের চলচ্চিত্রগুলো যেখানে এই দুঃসময়ে কাটিয়ে চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচানোর চেষ্টা করছে, সেখানে এই সামান্য অজুহাতে (শিল্পকলা একাডেমিতে সিনেমা প্রদর্শনী করা যাবে না) প্রদর্শনী বন্ধ করা উচিত হয়েছে? প্রথমত এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমি যতটুকু জানি, শিল্পকলা একাডেমির অনুমতি নিয়েই চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনের আয়োজন করেছিল প্রযোজনা সংস্থা। দ্বিতীয়ত শিল্পকলা একাডেমি কার জন্য? বিনোদন শিল্পের সর্বোচ্চ শিল্প যেখানে চলচ্চিত্র সেখানে একটি সরকারি অনুদান পাওয়া সম্পূর্ণ পারিবারিক চলচ্চিত্র গলুই’-এর রানিং শো বন্ধ করে দেয়া কতটা যৌক্তিক? আমার মনে হয় চলচ্চিত্রপ্রেমী সকল মামুষের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত।”

নির্মাতা ও অভিনেতা খিজির হায়াত খান লিখেছেন, মাননীয় ডিসি মহোদয় বাংলাদেশকে ১৯১৮ সালের আইনে আটকে না রেখে একটু সময়ের সাথে মুক্ত চিন্তা করতে শিখুন।’

তারা ছাড়াও চিত্রনায়ক আদর আজাদ, নির্মাতা দীপংকর দীপনসহ সিনেমা অঙ্গনের আরও অনেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে সাধারণ দর্শক-ভক্তরাও প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছেন।  উল্লেখ্য, গলুই’ সিনেমাটি ২০২০-২১ অর্থবছরে অনুদান পেয়েছিল। পাশাপাশি এটি প্রযোজনা করেছেন খোরশেদ আলম খসরু। এতে শাকিব খান ও পূজা চেরি ছাড়াও অভিনয় করেছেন আজিজুল হাকিম, সমু চৌধুরী প্রমুখ।


আরও খবর