Logo
শিরোনাম

ইমরানকে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনা

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ নভেম্বর ২০২১ | হালনাগাদ:শনিবার ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১২৮৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

পাকিস্তানের আর্মি পাবলিক স্কুলে জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একইসঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবানের সঙ্গে সরকার যে আলোচনা করছে তা নিয়েও প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করা হয় পাক প্রধানমন্ত্রীকে। করাচিভিত্তিক গণমাধ্যম ডনের খবরে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বুধবার দেশটির সময় সকাল ১০টায় ইমরান খানকে আদালতে সমন করে। তিন সদস্যের ওই বেঞ্চে আরও রয়েছেন বিচারক কাজী মোহাম্মদ আমিন আহমেদ ও বিচারক ইজাজুল আহসান। ডন জানিয়েছে, ইমরান খান আদালতে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পরে হাজির হন।

২০১৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আর্মি পাবলিক স্কুলে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা চালায় তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) জিহাদিরা। তারা গুলি চালিয়ে ১৪৭ জনকে হত্যা করে, যার মধ্যে ১৩২ জনই শিশু। সে সময় এ ঘটনায় নিহত শিশুদের পিতা-মাতার কাছে শোক প্রকাশ করে পাক সরকার।

এর বাইরে আর টিটিপির বিরুদ্ধে আর কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা আদালতকে জানাতে আগের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের ওই বেঞ্চ। কিন্তু ইমরান খানের সরকার টিটিপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে উল্টো জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে এক টেবিলে বসে তাদের দায়মুক্তি দেয়ার আলোচনা করছে। দেশটির তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী সোমবার জানান, টিটিপির সঙ্গে সরকারের সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

বুধবারের শুনানিতে বিচারক আমিন মনে করিয়ে দেন যে, পাকিস্তান কোনো ছোট রাষ্ট্র নয়। দেশটির রয়েছে বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম সেনাবাহিনী। আমাদের টিটিপির বিরুদ্ধে যথাযথ শক্তি প্রয়োগ করার কথা, অথচ আমরা এখন তাদের সঙ্গে দরকষাকষি করছি! সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানকে প্রশ্ন করেন, আমরা কি আবারো সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছি? তিন সদস্যের বেঞ্চ পুরো সময়জুড়ে ইমরান খানকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে যায়। মাঝে কথা বলার সুযোগ দেয়া হলেও তাকে ভর্ৎসনা করা অব্যাহত রাখেন বিচারকরা। প্রধান বিচারপতি গুলজার বলেন, আপনি ক্ষমতায় আছেন, সরকারও আপনারই। কিন্তু এই ক্ষমতা ব্যবহার করে আপনি করেছেন কি? আপনি অপরাধীদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছেন। যেসব বাবা-মা তাদের সন্তান হারিয়েছে তাদের বিচার পাওয়া জরুরি।

শুনানিতে আদালত ইমরান খানকে হতাহত শিশুদের বাবা-মায়ের অবস্থান বুঝার আহ্বান জানান। বিচারকরা বলেন, টিটিপিকে বিচারের মুখোমুখি করতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে যার যার অবহেলা রয়েছে তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে সরকারকে প্রথমে ২ সপ্তাহের সময় দেন আদালত। পরে অনুরোধের মুখে এ সময় বাড়িয়ে ৪ সপ্তাহ করা হয়। এরপর ইমরান খানকে আবারো প্রশ্ন করতে শুরু করেন বিচারকরা। প্রধান বিচারপতি গুলজার হাতে পাকিস্তানের সংবিধান তুলে নিয়ে ইমরান খানকে বলেন, এটি প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলেছে। জবাবে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ওই হামলাটি ছিল হৃদয়বিদারক। হামলার খবর পেয়েই রাতের বেলা আমার দলের বৈঠক ডেকেছিলাম। আদালতকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালত অর্ডার ইস্যু করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে ৪ সপ্তাহের সময় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আদালতকে কথা দিয়েছেন যে, এই সময়ের মধ্যে টিটিপিকে বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হওয়ার সঙ্গে জড়িত সকলকে চিহ্নিত করা হবে। হোক সে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে কিংবা শক্তিশালী সংস্থাগুলোর কোনো কর্মকর্তা। পাক তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইমরান খান আবারো আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আদালতে হাজির হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার ৪ সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিবেদন তৈরি সমপন্ন করে আদালতে জমা দেবে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইমরান খান চাইলে সহজেই দায়মুক্তি নিতে পারতেন কিন্তু তেহরিক-ই-ইনসাফ বিশ্বাস করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজের স্বার্থ চিন্তা করলে হবে না। তেহরিক-ই-ইনসাফের অধীনে থাকা ৩ বছর পাকিস্তানের ইতিহাসের সব থেকে শান্তিপূর্ণ সময় বলেও দাবি করেন তিনি।

এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাবেদ খানের কাছে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, এর আগে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা প্রধানমন্ত্রী পড়েছেন কিনা? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, ওই নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানোই হয়নি। এমন জবাবে ক্ষিপ্ত হন প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ। তিনি বলেন, এটাই কি আপনাদের সিরিয়াসনেসের ধরন? প্রধানমন্ত্রীকে ডাকুন। তার সঙ্গে আমরাই কথা বলবো। এই অবস্থা চলতে পারে না। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, যখন নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা, তখন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোথায় নিখোঁজ? সাবেক সেনাপ্রধান এবং দায়ী অন্যদের বিরুদ্ধে কি কোনো মামলা দায়ের হয়েছিল? দেশে বিপুল এক গোয়েন্দা সিস্টেম সচল আছে। এর পিছনে শত শত কোটি রুপি খরচ হচ্ছে। দাবি করা হয় যে, আমাদের গোয়েন্দা এজেন্সি বিশ্বের সেরা। তাদের পিছনে এত অর্থ খরচ করা হচ্ছে। অথচ এর ফল শূন্য! প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ আরো বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের মরতে দিতে পারে না আদালত। স্কুলের প্রহরী এবং সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। তাতে যদি শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করতে হয়, তবুও বিচারের আওতায় আনা উচিত। কারণ, উচ্চ পদে যারা থাকেন তারাও বেতন-ভাতা নেন, সুবিধা নেন। তারপর দায়িত্ব থেকে সরে যান। বিচারপতি আহসান আরও বলেন, ভেতর থেকে সমর্থন ছাড়া সন্ত্রাসীদের পক্ষে স্কুলে ওই হামলা করা সম্ভব ছিল না। একে তিনি নিরাপত্তা ব্যর্থতায় হামলা বলে উল্লেখ করেন। 


আরও খবর

রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন এরদোয়ান

মঙ্গলবার ২৯ আগস্ট ২০২৩