চীনের প্রিমিয়ার লি কেপিয়াং দেশটির শ্রমবাজার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। দেশটির অন্যতম শীর্ষ এই নেতা শ্রমবাজারের পরিস্থিতি ‘ভয়ংকর’ অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন। নতুন করে কোভিড-১৯ শুরু হওয়ায় দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ তথ্য দিলেন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির নেতা।
চীনের বর্তমান শাসকদল কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা লি কেপিয়াং। তিনি কর্মসংস্থান পরিস্থিতিকে ‘জটিল ও স্থবির’ বলেও উল্লেখ করেন। এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি এক বিবৃতিতে তিনি সরকারের সব স্তরকে চাকরির পদ বাড়াতে ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার উপায় নিয়ে সহায়তা প্যাকেজ, ইন্টারনেট অর্থনীতিকে সহায়তা করা এবং নিজস্ব ব্যবসা চালু করার জন্য জনসাধারণকে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া। সবশেষে চাকরি হারানো কর্মীদের জন্য বেকার ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা চালু করা।
‘মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য স্থিতিশীল শ্রমবাজার প্রয়োজন এবং এর মধ্য দিয়েই অর্থনীতি চাঙা রাখতে যুক্তিসংগত উপায়ে সহায়তা করা যাবে,’ বলেন লি। গত দুই বছরের মধ্যে চীনে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে, যে সময় তিনি এই মন্তব্য করেন বলে জানায় সরকারি সূত্র।
চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে প্রতি বছর কয়েক লাখ নতুন কর্মসংস্থান দরকার। এজন্য সরকারের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য চলতি বছর সরকারকে শহর ও নগরে কমপক্ষে এক কোটি ১০ লাখ পদ সৃষ্টি করতে হবে। তবে মার্চে লি জানান, তিনি এক কোটি ৩০ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আশাবাদী। তখন নতুন গ্র্যাজুয়েট এবং গ্রাম থেকে আসা কর্মীর প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন লি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় তিনি কর্মসংস্থানের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বেশ কয়েকবার সরকারের নানা পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং চলতি সপ্তাহের এই মন্তব্যে বোঝা গেছে, কভিড বিধিনিষেধের চরম মূল্য দিচ্ছে চীন। ওমিক্রন ধরনের প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে দেশটি। এখন পর্যন্ত ৩১টি শহরকে পূর্ণ বা আংশিক লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। এ কারণে ক্ষতিতে পড়তে পারেন দেশটির ২১ কোটি ৪০ লাখ নাগরিক।
দুই বছর ধরে চলা মহামারিতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জিরো কভিড নীতি দ্বিগুণ করেছেন। অথচ একই সময় বিশ্বের অন্য দেশগুলো এ ভাইরাস নিয়েই বেঁচে থাকার উপায় শিখছে। অথচ জিরো কভিড নীতি বাস্তবায়নের জন্য তিনি গণপরীক্ষা ও কঠোর লকডাউনের পথেই হাঁটছেন। এই নীতি অমান্যকারীকে শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। লকডাউনের কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ‘প্রায় ভেঙে পড়ছে’ বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায় সোসিয়েটে জেনারেলের বিশ্লেষকরা। গত এপ্রিলে চীনের বৃহত্তম চাকরির বাজার ‘সেবা খাত’-এ ধস নামে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লকডাউনের কারণে দিশাহারা হয়ে পড়েন। একই সঙ্গে উৎপাদন খাতেও পতন দেখা যায়।
সরকারের সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মার্চে বেকারত্বের হার ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিন্ম পর্যায়ে নামে। সে মাসে দেশটির ৩১টি শহরে রেকর্ড বেকারসংখ্যা বেড়ে যায়। দেশটির অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি খাতেও অপ্রত্যাশিতভাবে কর্মসংস্থান কম হচ্ছে। খাতটিতে কর্মরতরা একসময় বেশ মোটা অঙ্কের মজুরি পেতেন। কিন্তু সরকার এ খাতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর একের পর এক নিয়মনীতি চাপিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রযুক্তি খাত। বিষয়টি নিয়ে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আবাসন থেকে শিক্ষা খাতেও চাকরির বাজার সংকুচিত হয়েছে। অর্থনীতির এ করুণ দশা সম্পর্কে অবগত বেইজিং। গণবেকারত্ব কমিউনিস্ট সরকারের কপালে চিন্তা ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। তাই ভাইস প্রিমিয়ার হু চুনহুয়া বলেন, কর্মসংস্থান স্থিতিশীল রাখতে ‘সব ধরনের প্রচেষ্টা’ অব্যাহত রয়েছে।