Logo
শিরোনাম

অশান্ত ইরান শান্ত হবে কবে

প্রকাশিত:বুধবার ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৩ অক্টোবর ২০২৩ | ৪২৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর জেরে চলতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে ইরানে যে অভূতপূর্ব সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার জের এখনও চলছে। বলা যায়, এই আন্দোলন ইরানের ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী শাসকগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ নতুন যুগের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। সরকার প্রবর্তিত হিজাবনীতি লঙ্ঘন করায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে পুলিশের হাতে আটক হন ২২ বছরের তরুণী মাশা আমিনি। কয়েক ঘণ্টা হেফাজতে থাকার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় মাশা আমিনির। মাশার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হেফাজতে ব্যাপক নির্যাতনের কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার।

১৬ সেপ্টেম্বর মাশার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই তাকে গ্রেপ্তারে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয় ইরানের ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে। সরকারের আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেই বিক্ষোভে দমন-পীড়ন শুরু করার পর তা পরিণত হয় সরকারবিরোধী আন্দোলনে, এবং দাবানলের মতো তা ছড়িয়ে পড়ে দেশটির সর্বত্র। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সরকারি বাহিনীর সদস্যদের সহিংসতা ও নির্যাতনের মাত্রাও।

ইরানের এই গণআন্দোলনের সমর্থক সংবাদমাধ্যম হারানা নিউজ এজেন্সির দাবি, আন্দোলনের শুরু থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে দেশজুড়ে নিহত হয়েছেন ৫০৬ জন আন্দোলনকারী, তাদের মধ্যে ৬৯ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। অবশ্য পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার বেশ কিছু ঘটনাও ঘটেছে বিভিন্ন শহরে। সেসব হামলায় প্রাণ গেছে ৬৬ জন সদস্যের। ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহালভিকে হটিয়ে শাসনক্ষমতা দখল করা ইসলামি শাসকগোষ্ঠী তাদের গত ৪ দশকের শাসনামলে এমন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ কখনও দেখেনি। আন্দোলনের শুরুর দিকে এই  শাসকগোষ্ঠী বিক্ষোভকারীদের নৈরাজ্যবাদী, সন্ত্রাসী, অন্যদেশের চর বলে উল্লেখ করে সাধরণ লোকজন থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চেষ্টা করেছিল।

কিন্তু এই প্রচেষ্টা কোনো কাজে আসেনি; বরং সরকার বিক্ষোভকারীদের প্রতি যত কঠোরতা প্রদর্শন করেছে, আন্দোলনের প্রতি দেশটির সাধারণ জনগণ সাড়া দিয়েছেন তার চেয়েও বেশি হারে। ইরানের এই গণআন্দোলন দেশটির ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী শাসকগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করার মতো শক্তিশালী নয়। কারণ, প্রথমত শাসকগোষ্ঠীর সদস্যরা যে নিরাপত্তা বলয়ে বসবাস ও চলাফেরা করেন তা অত্যন্ত সুরক্ষিত। ইরানের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর লোকবল যথেষ্ট, অস্ত্রভাণ্ডারও সমৃদ্ধ।

দ্বিতীয়ত, সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা এখন পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে কোনো নেতা দাঁড় করাতে পারেননি, যিনি বা যারা  নেতৃত্ব দিয়ে এই বিক্ষোভকে একটি লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে পারবেন। স্বতঃস্ফূর্ত আবেগই এই বিক্ষোভের মূল ভিত্তি এবং আন্দোলনকে কোনো লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করার প্রবণতা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে প্রায় অনুপস্থিত। কিন্তু তারপরও বলা যায়, গত চার দশক ধরে ক্ষমতায় আসীন শাসকগোষ্ঠীর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে এ আন্দোলন। সাধারণ জনগণ যে মাত্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন শাসকদের বিরুদ্ধে, তার সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা একেবারেই পরিচিত নয়। আন্দোলন কবে নাগাদ থামবে তার নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারছে না এবং বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে, শাসকগোষ্ঠীর যে কোনো ভুল পদক্ষেপ দেশটিকে আরও গভীর সংকটের আবর্তে ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এদিকে, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি কার্যকর করতে গত তিন বছর ধরে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। যদি এই চুক্তি কার্যকর করা সম্ভব হয়, তাহলে দেশটির ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা অনেক নিষেধাজ্ঞা শিথিল হবে, প্রাণ ফিরে পাবে জাতীয় অর্থনীতি। ২০১৭ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে বের করে এনেছিলেন, সেই সঙ্গে জারি করেছিলেন অতিরিক্ত বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা। ২০২০ সালে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। চলতি বছর বা আগামী বছরের প্রথমার্ধের মধ্যে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহারের সবুজ সংকেতও পাওয়া যাচ্ছিল।

কিন্তু চলমান এই সরকার বিরোধী আন্দোলন সেসব সম্ভাবনা প্রায় পুরোপুরি তছনছ করে দিয়েছে। মাশা আমিনির মৃত্যু ও তার পর আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়নে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ইতোমধ্যেই ইরানের ওপর ব্যাপক ক্ষোভ জানিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘভিত্তিক নারী অধিকার ও ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত সংস্থা থেকেও বাদও দেওয়া হয়েছে ইরানকে। দ্রুত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হলে আগামী ২০২৩ সাল থেকেই গভীর অর্থসংকটে পড়বেন ইরানের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগণ।

যা হতে পারে ২০২৩: আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের বর্তমান সংকটের মূল নিহিত আছে দেশটির কট্টরপন্থী শাসকগোষ্ঠীর মনোভাবের মধ্যেই। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বিশ্বাস করেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান যেসব আদর্শিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সরকারের হিজাবনীতি সেসবের মধ্যে অন্যতম এবং এটির সঙ্গে আপোস করা হলে সমূহ বিপর্যয় নেমে আসবে। সরকারের এই অনড় অবস্থানই সাড়ে আট কোটি মানুষ অধ্যুষিত দেশটির জনগণ, যাদের ৭০ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের কমআরো বেশি ক্ষুব্ধ করে তুলছে। আবার শাসকগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও দিন দিন বাড়ছে। ইরানের ক্ষমতাকাঠামোতে সর্বোচ্চ নেতা পদটি একসঙ্গে অত্যন্ত ক্ষমতা ও মর্যাদাসম্পন্ন। ৮৩ বছর বয়স্ক খামেনির মৃত্যুর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা কে হবেন তা নিয়ে বিভক্তি শুরু হয়েছে শাসকগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে। এখন পর্যন্ত যদিও এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসেনি, তবে যদি দ্রুত এটির কোনো সমাধান না হয় সেক্ষেত্রে জটিলতা আরও বাড়বে ইরানে।

নিউজ ট্যাগ: মাশা আমিনি

আরও খবর

রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন এরদোয়ান

মঙ্গলবার ২৯ আগস্ট ২০২৩