Logo
শিরোনাম

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষার প্রহর গুণছেন পশ্চিমবঙ্গবাসীও

প্রকাশিত:শনিবার ২৫ জুন ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ২৬ নভেম্বর ২০২৩ | ৮১০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারপরেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় আপামোর বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রহর গুনছেন পশ্চিমবঙ্গের একটি বড় অংশের মানুষ। এই সেতু চালু হয়ে গেলে পদ্মাপারের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি যেমন বদলে দেবে, ঠিক সেভাবেই প্রতিবেশী দেশ ভারত বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যবসা বাণিজ্য থেকে ভ্রমণ প্রতি ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাবস্থাকে সহজ করে তুলবে এই পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় যতো এগোচ্ছে ততোই বাঙ্গালির হৃদয়ে যেন পদ্মার পটভূমি চিত্রকরের আঁকা ক্যানভাসে ক্রমশ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। সেখানে কোথায় দুই দেশের সীমানা, কোথায় কাটাতার? সব যেন মিলেমিশে একাকার পদ্মা সেতুর বাধনহারা উচ্ছাসে। দুই বাংলাই যেন সমানতালে উচ্ছাসে ভাসছে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়া মানেই দুই দেশের দূরত্ব এক লহমায় অনেকটাই কমে যাওয়া। পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ী থেকে পর্যটনের কাজে যারা বছরে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে যাতায়াত করেন, তাদের কাছে পদ্মা সেতু উদ্বোধন মহা আনন্দের এক মাহেন্দ্রক্ষণ। যারা ভারত থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন কাজে যাতায়াত করেন, তাদের কাছেও পদ্মা সেতু মানে আজ আনন্দের।  পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে আপামোর পশ্চিমবঙ্গবাসীর সাথে আবেগে ভাসছেন পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, দুই বাংলার মধ্যে সম্পর্কের এই নতুন সেতুবন্ধন ঘটাবে পদ্মা সেতু। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, আমরা আশা করবো যে এই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন প্রসঙ্গে কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর জানান পদ্মা সেতু কেবলমাত্র বাংলাদেশের গর্ব নয়, এই সেতু গোটা উপমহাদেশের গর্ব। এটি স্থাপত্যের এক অভিনব নিদর্শন। এর দৈর্ঘ্য, ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা, সড়ক পথে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা তো আছেই, এই সেতু  বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদে তৈরি ফলে বাংলাদেশে ধীরে ধীরে আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে-এটা তার একটা বহি:প্রকাশই নয়, তার একটা পরিচায়ক। আর সেটা করে বাংলাদেশে দেখাতে পেরেছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে বাংলাদেশ হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যেও যাতায়াতের ক্ষেত্রেও দূরত্ব অনেক কমে যাবে। এতে ভারতও উপকৃত হবে। কলকাতা বইমেলার আয়োজক সংস্থা কলকাতা বুক সেলার্স এন্ড গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক সেখানে পদ্মা সেতু একটা সেতু হয়ে দাঁড়াবে। এই সেতু হলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে  দূরত্বের যে সময়ের ব্যবধান সেই সময় অনেক কমে যাবে।

কলকাতার নিউমার্কেটের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানান, এই পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে খুব সুবিধা হবে এখন ফেরি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়  বলে ২-৩ ঘন্টা সময় বেশি লাগছে, যাত্রীদের অনেক হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। এমনিতে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ভালো। আসা-যাওয়ার সুবিধা হলে এই সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। এর ফলে আরো বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা এপারে আসতে পারবেন।  আমরা অপেক্ষাতে আছি পদ্মা সেতু চালু হওয়ার। এই সেতু চালু হলে আমাদের ব্যবসা বৃদ্ধি হবে। তাছাড়া কলকাতার নিউমার্কেট ব্যবসাটা অনেকটাই বাংলাদেশ পর্যটকদের উপর নির্ভর করে চলে, সেক্ষেত্রে স্থানীয় ফুটপাত ওয়ালা, রিক্সা ওয়ালা, বেকারদের কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশ থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা পশ্চিমবঙ্গের কয়েক কোটি মানুষের হৃদয় আজ উদ্বেলিত।

পশ্চিমবাংলার উঠতি প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে পদ্মা সেতুর আবেগ। কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ একটা সেতুর নীচ দিয়ে ট্রেন, উপর দিয়ে যানবাহন কী করে যাওয়া সম্ভব, সেই দৃশ্য দেখতে ইউটিউব আর গুগুল সার্চে তাদের এখন প্রথম পছন্দ পদ্মা সেতু। তাই শুধু বাংলাদেশেই নয়, পদ্মা সেতুর আবেগ এখন পশ্চিমবঙ্গের আবালবৃদ্ধ বণিতার  মধ্যেও আগ্রহের ঝড় তুলেছে। উদ্বোধনের আগেই পদ্মা সেতুর তুলনা যেন সে নিজেই। পদ্মা সেতুর তুলনা আর কোনও  সেতুই যেন হতে পারে না। এ বিশ্বাসে আত্ম অহংকারের গর্বিত পশ্চিমবাংলার বহু মানুষই। পশ্চিমবাংলার বাঙালি সমাজ আজ পদ্মা সেতুর গরবে যেন গর্ব অনুভব করছে। বাঙালি যে বিশ্বের সেরা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে তার নমুনা অবশ্যই বাংলাদেশের পদ্মা সেতু। পদ্মার ঢেউ কতোটা উদ্বেল সেই বিচার না গিয়ে এপার বাংলার আপামোর মানুষের একটা বড়ো অংশের হৃদয় পর্যবেক্ষণ করলেই আজ স্পষ্ট বোঝা যাবে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাহেন্দ্রনিক ক্ষণ পদ্মার ঢেউয়ের উদ্বেলতাকে নিঃসন্দেহে ছাপিয়ে যাবে।

নিউজ ট্যাগ: পদ্মা সেতু

আরও খবর