Logo
শিরোনাম

সাধারণ মানুষের জন্য ডিসি অফিসের দরজা খোলা রাখুন : হাইকোর্ট

প্রকাশিত:সোমবার ২২ আগস্ট 20২২ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ নভেম্বর ২০২৩ | ৭৩৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

সাধারণ মানুষের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের (ডিসি অফিস) দরজা-জানালা খোলা রাখতে বলেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে সতর্ক করে তার অফিসের দরজা-জানালার পর্দা সরিয়ে ফেলতে বলেছেন।

আদালত অবমাননা অভিযোগের মামলার আদেশকালে সোমবার (২২ আগস্ট) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। ডিসি ও এসপির পক্ষে আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান, ব্র্যাকের এমডির পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ মিনহাজুল হক শুনানিতে ছিলেন। অপরদিকে ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী শুনানি করেন।

এ সময় আদালত অবমাননার মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তখন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলামকৃত সম্পত্তি গ্রহণকারী ব্যবসায়ীও উপস্থিত ছিলেন।

পরে আদালত অবমাননায় জারি করা রুলের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৪ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেন আদালত।

আদেশ শেষে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককে আদালত ডায়াসের কাছে ডেকে নেন। পরে তাকে উদ্দেশ আদালত বলেন, আপনাকে আদালতে আসতে হবে না। তবে আপনাকে সতর্ক করছি, সাধারণ জনগণের জন্য আপনাদের দরজা খোলা রাখবেন। দরজা জানালায় কোনও পর্দা থাকবে না। মানুষ যাতে আপনাকে দেখতে পারে, আপনি কি করছেন, আপনি বসে আছেন এটা যেন সাধারণ মানুষ দেখতে পারে। সাধারণ মানুষ যেন সহজেই আপনার কাছে যেতে পারে।

আদালত আরও বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, ডিসি অফিসে সাধারণ মানুষ যেতে পারে না। দরজা-জানালায় ভারী পর্দা দেওয়া থাকে। যে কোনও মানুষ যাতে আপনার কাছে যেতে পারে, সেজন্য কোনও ভারী পর্দা থাকবে না। আপনারা লাক্সারিয়াজ জীবন-যাপন করেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আপনাদের তেমন যোগাযোগ থাকে না। সব শ্রেণির মানুষ যাতে আপনাকে দেখতে পারে, আপনি বসে কাজ করছেন। লুঙ্গি পড়েও যেন একজন মানুষ আপনার কাছে যেতে পারে। ভালো কাজ করুন। চুরি-ডাকাতি-গুণ্ডামি-দখলবাজি যদি চলে, আর এটা যদি আপনার নজরে আসে, সঙ্গে সঙ্গে আপনি দেখবেন।

আদালত বলেন, অভিযোগ শুনেই আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। একজন জেলা প্রশাসক সরকারের হার্ট। আপনাদের দায়িত্ব অনেক। আপনাদের কাজের ওপরে সরকারের ভাবমূর্তি নির্ভর করে। সরকারের সব কাজ আপনাদের দিয়েই বাস্তবায়ন হয়। জানি, আপনারা অনেক কাজ করেন। কিন্ত তারপরও সাধারণ মানুষের জন্য আপনাদের দরজা খোলা রাখুন।

আদালত বলেন, সেদিন এ মামলায় অভিযোগকারী আপনার কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আপনার কাছ পর্যন্ত যেতে পারেননি। আপনার অফিসের লোকজন অভিযোগ গ্রহণ করেননি। সেদিন যদি আপনি অভিযোগটি শুনতে পেতেন, তাহলে হয়তো এতদূর আসতো না। এজন্য আপনাদের দরজা, জানালায় কোনও পর্দা থাকবে না। আমরা এটা দেখবো।

প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ার আইলচারায় অবস্থিত মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স অ্যান্ড ভিআইপি রাইস মিল ব্র্যাক ব্যাংক পোড়াদাহ শাখার কাছে ঋণ চাইলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জমির ভ্যালুয়েশন করে ৯২ কোটি টাকা। ব্র্যাক ব্যাংক পোড়াদাহ শাখা সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ওই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ৪৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। ভিআইপি রাইস মিল সময়মতো ঋণের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অতি গোপনে অখ্যাত কাগজে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপর ব্যবসায়ী নিলাম বিজ্ঞপ্তি স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেন।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত ২ আগস্ট ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল ও ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিল নিলাম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এক মাসের মধ্যে ২০ কোটি টাকা ব্র্যাক ব্যাংককে দিতে বলা হয়। এছাড়া আরও ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।

কিন্তু আদালতের এ আদেশ লঙ্ঘন করে গত ৫ আগস্ট ভোরে পুলিশের সহযোগিতায় ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদের মালিকানাধীন রশিদ এন্টারপ্রাইজের নামে। পরে ওই ঘটনায় নিলামের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়।

সেই আদালত অবমাননার মামলার শুনানি নিয়ে আদালতের আদেশ অমান্যের অভিযোগে ব্যাখ্যা দিতে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসাইন, কুষ্টিয়ার ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, এসপি মো. খায়রুল আলম, সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলম ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদকে তলব করেন হাইকোর্ট। তাদেরকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন আদালত। গত ১১ আগস্ট বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় রবিবার (২১ আগস্ট) আদালত অবমাননার মামলায় হাইকোর্টের তলব আদেশে হাজিরা দেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলামকৃত সম্পত্তি গ্রহনকারী ব্যবসায়ী। তাদের ব্যাখ্যার ওপর শুনানি শেষে আজ  ২২ আগস্ট আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেছিলেন আদালত। এদিন তাদের সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলেছিলেন আদালত।


আরও খবর