Logo
শিরোনাম

সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে তাণ্ডব: ৯ বছরেও হয়নি বিচার

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০৩ মার্চ ২০২২ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ১২১৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

২০১৩ সালের ৩ মার্চ। হঠাৎ চারপাশে চিৎকারের শব্দ। কী হচ্ছে দেখতে ঘর থেকে বাইরে বের হন বগুড়ার শাজাহানপুরের আওয়ামী লীগের সমর্থক বাদশা আলম। বাইরে এসে দেখলেন জামায়াত-বিএনপির তাণ্ডব। উপজেলা পরিষদ চত্বর, থানা, ফাঁড়ি কিছুই বাদ যায়নি। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হলো বগুড়া জেলার কয়েকটি অঞ্চল।

জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের ওইদিন উপজেলা চত্বরে হামলা চালাতে দেখেছি। ওরা যখন থানায় হামলা চালাল তখন আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি করল। ওই গুলিতে মারা গেল তিনজন। সবই ঘটল আমার চোখের সামনে, বললেন শাজাহানপুরের আওয়ামী লীগের সমর্থক বাদশা আলম।

বগুড়ায় ২০১৩ সালের ৩ মার্চ যুদ্ধাপরাধী দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে নৃশংস তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। ওই ঘটনায় হয়েছিল ১০৪টি মামলা, যা গত ৯ বছরেও শেষ হয়নি।

জামায়াত নেতা সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে বিএনপি-জামায়াতের লক্ষাধিক নেতাকর্মী আর সমর্থকরা ওইদিন ভাঙচুর চালায় থানা-ফাঁড়িসহ শতাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। পুলিশের ভাষ্যমতে, জেলাব্যাপী ওই তাণ্ডবে ক্ষতির পরিমাণ ছিল অন্তত ১০০ কোটি টাকা। যদিও দীর্ঘ ৯ বছরে চিহ্নিত আসামিদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সাক্ষ্যগ্রহণসহ নানা জটিলতার কারণে অভিযুক্তদের শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই।

প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলাসূত্রে জানা যায়, ওই বছরের ৩ মার্চ গভীর রাতে মোবাইল ফোনসহ সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যম কাজে লাগিয়ে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েক হাজার জনতাকে রাস্তায় নামানো হয়েছিল।

এ সময় জামায়াত সমর্থকরা বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার পাশাপাশি নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ চত্বরের ১৬টি অফিস, থানা-ফাঁড়িসহ ১২টি পুলিশ স্থাপনা এবং বগুড়ায় শতাধিক সরকারি-বেসসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওইদিন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় গুলিতে মারা যায় নারী-পুরুষসহ ১১ জন। ওই ঘটনায় নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত প্রায় লক্ষাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়েছে ১০৪টি। এ ছাড়াও আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৭৫১ জনের বিরুদ্ধে। হামলাকারীদের এখনো শাস্তি ও বিচারের আওতায় না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। যারা এসব গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নামিয়েছিলেন, চালিয়েছিলেন তাণ্ডব- তাদের মধ্যে চিহ্নিত অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

স্থানীরা বলছেন, শাজাহানপুর উপজেলা জামায়াতের আমির এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ইয়াসিন আলী ও তার ছেলে রুবেল প্রকাশ্যে মামলা চালায়। তাদের বিচার এখনো শুরু না হওয়ায় আক্ষেপ জানান এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা। বর্তমানে ইয়াসিন আলী ও তার ছেলে রুবেলসহ সপরিবারে এখন বসবাস করছে মালয়েশিয়ায়। ঘটনার এক বছরের মধ্যেই তারা বগুড়া থেকে বিদেশে পালিয়ে যায়।

এ মামলার সাক্ষী বগুড়ার শাজাহানপুরের আওয়ামী লীগের সমর্থক বাদশা আলম বলেন, জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের ওইদিন উপজেলা চত্বরে হামলা চালাতে দেখেছি। ওরা যখন থানায় হামলা চালাল তখন আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি করল। ওই গুলিতে মারা গেল তিনজন। সবই ঘটল আমার চোখের সামনে।

শাজাহানপুর আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা ভবনে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে দুটি। ২০২০ ও ২০২১ সালে দুবার আদালতে সাক্ষ্য দিলেও বিচারকাজ চলছে খুব ধীরগতিতে।

চাঁদে কোনো মানুষকে দেখা গেছে- এমন ঘটনা পৃথিবীতে কখনো ঘটেনি। আর কখনো ঘটবেও না বলে জানিয়েছেন মসজিদের ইমামরা।

নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম শাহ জালাল বলেন, ইসলাম এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা কখনো সমর্থন করে না। যুগে যুগে যেখানে কোনো নবী-রাসুলকেও চাঁদে দেখা যায়নি, সেখানে সাধারণ একজন মানুষকে কীভাবে চাঁদে দেখা যায়? আর এ কথা শুনে যারা রাস্তা নেমেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে তারা ইসলাম সম্পর্কে জানে না।

ওইদিন ভোররাতে গুলিতে মারা যায় বগুড়ার শাজাহানপুরের ডোমনপুকুর এলাকার তোতা মিয়ার স্ত্রী। জানা গেছে, ঘটনা দিন তার স্ত্রী ফজরের নামাজ শেষ করে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে মহাসড়কে থাকা জনতার সঙ্গে মিছিল করার কিছু সময় পর গুলিতে তার মৃত্যু হয়।

বগুড়া জজকোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মতিন বলেন, ১০৪টি মামলায় প্রত্যেকটির চার্জশিট হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান রয়েছে। বিচারকাজ শেষ হবে শিগগিরই, এমন দাবি দুই বছর আগে ছিল রাষ্ট্রপক্ষের। কিন্তু এখনো আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারেনি অনেকেই। যেভাবে মামলার কার্যক্রম চলছে তাতে নিম্নআদালতে বিচার শেষ হতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।

এসব তাণ্ডবের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত জোটের সাড়ে চার হাজারের বেশি সমর্থক আর নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ৯ বছর আগে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশ সাক্ষীরা। ওই ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক ধারণায় বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থকদের তাণ্ডবে জেলায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১০০ কোটি টাকা।


আরও খবর