দুর্দান্ত স্কোয়াড
নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে যাওয়া ব্রাজিলকে ধরা হচ্ছিল এবার শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার।
অথচ, ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে নেইমার-থিয়াগো
সিলভাদের। ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে ব্রাজিলের কোচের পদ ছেড়ে দিয়েছেন ছয় বছর ধরে দায়িত্বে
থাকা তিতে। আগামী বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে এখনই নতুন কোচের সন্ধানে নেমে গেছে কনফেডারেশন
অব ব্রাজিল ফুটবল (সিবিএফ)।
কাতার বিশ্বকাপে
হট ফেবারিট হিসেবে অংশ নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন
ব্রাজিল। ৯ ডিসেম্বর ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে নেইমারদের।
বিশ্বকাপের আগেই কোচ তিতে জানিয়েছিলেন, ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতুক বা না জিতুক, তিনি বিশ্বকাপের
পর দলের দায়িত্ব ছাড়ছেন। বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বিদায়ের পরপরই পদত্যাগ করেন ৬১ বছর
বয়সি কোচ তিতে।
২০১৬ সালে দুঙ্গার
হাত থেকে ব্রাজিল দলের দায়িত্বভার বুঝে নেয়ার পর প্রথম ম্যাচেই ইকুয়েডরের বিপক্ষে ৩-০
গোলের জয় এনে দেন দলকে। ২০১৮ বিশ্বকাপেও দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলেন তিনি। তবে সেখানে
বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হেরে বিদায় নেয় পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। তবে তাকে
আরও এক বিশ্বকাপ পর্যন্ত দলের দায়িত্ব দেয় কনফেডারেশন।
তিতের পদত্যাগের
পরপরই নতুন কোচের সন্ধানে নেমে পড়েছে কনফেডারেশন অব ব্রাজিল ফুটবল। সম্ভাব্য কোচের
তালিকায় যেমন আছেন স্বদেশী কোচ, তেমনি ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের নামীদামী কয়েকজনের নামও
শোনা যাচ্ছে বেশ। এদের মধ্য থেকেই পরবর্তী কোচ বেছে নেয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ফার্নান্দো দিনিজ:
আপাতত ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন দিনিজ। কোচিং দর্শনের
জন্য ৪৮ বছর বয়সি এই কোচকে ব্রাজিলের গার্দিওলা বলে ডাকা হয়। ছোট্ট কোচিং ক্যারিয়ারে
এরই মধ্যে ১৭টি ব্রাজিলিয়ান দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। দলকে তিকি-তাকা স্ট্যাইলে
খেলাতে পছন্দ করেন। পজেশন ধরে রেখে দলকে খেলান তিনি। তার আক্রমণাত্মক ফুটবল দর্শন ব্রাজিলের
খেলার ধরণের সঙ্গে বেশ মানানসই, তাই সমর্থকদের পছন্দে তিনিই শীর্ষে। ক্যারিয়ারে খুব
বেশি ট্রফি না থাকলেও কোচ হিসেবে তার রেকর্ড বেশ ঈর্ষণীয়। তার অধীনে সাও পাওলো টানা
১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডও গড়েছিল।
রেনাতো গাওচো:
ব্রাজিলের ক্লাব গ্রেমিওর কোচের দায়িত্ব পালন করছেন ৬০ বছর বয়সি এই কোচ। ১৯৯০ সালে
ব্রাজিলের হয়ে খেলেছেন বিশ্বকাপও। ২৬ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে সামলেছেন দেশের নামকরা
বেশ কয়েকটি ক্লাবের ভার। গ্রেমিওকে জিতিয়েছেন মহাদেশীয় শিরোপা।
আক্রমণাত্মক কোচ
রেনাতোর খ্যাতি আছে ভালো ব্যবস্থাপক হিসেবেও। তার অধীনে খেলা প্রায় সব খেলোয়াড়ই তার
প্রশংসাই করেছে।
আবেল ফেরেইরা:
তালিকায় আছেন পর্তুগিজ কোচ আবেল ফেরেইরাও। এই মুহূর্তে ব্রাজিলিয়ান দল পালমেইরাসের
কোচের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। পালমেইরাসকে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের সব শিরোপা জেতানো
এই কোচ জিতিয়েছেন মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা কোপা লিবার্তাদোরেস, যা নজর কেড়েছে
সিবিএফেরও।
ফেরেইরার জন্য
বড় বাধা তার জাতীয়তা। ব্রাজিলিয়ানরা সাধারণত তাদের কোচ হিসেবে বিদেশীদের পছন্দ করে
না। তবে, ফেরেইরার মতো ব্রাজিলিয়ানদের ভাষাও পর্তুগিজ হওয়ায় অনেকেই সুযোগ দেখছেন তার।
দরিভাল জুনিয়র:
ব্রাজিলের মহাতারকা নেইমারের উত্থানটা কাছ থেকে দেখেছেন দরিভাল জুনিয়র। নেইমার যখন
সান্তোসে ক্যারিয়ার শুরু করেন তখন কোচের দায়িত্বে ছিলেন তিনিই। ২০ বছরের দীর্ঘ কোচিং
ক্যারিয়ারে সবশেষ সামলেছেন ফ্ল্যামেঙ্গোর দায়িত্ব। ক্লাবটিকে জিতিয়েছেন কোপা লিবার্তাদোরেস।
তবে দরিভাল ব্রাজিলের
দায়িত্বে আসলে জাতীয় দলে নেইমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত অনেকেই। সান্তোসে থাকাকালীন
নেইমারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েই ২০১০ সালে বরখাস্ত হয়েছিলেন তিনি।
ব্রাজিলিয়ানদের
বাইরে ইউরোপের কয়েকজন নামিদামী কোচের নামও শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য কোচ হিসেবে। এদের মধ্যে
সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ কোচ পেপ গার্দিওলার নাম। ব্রাজিলের
একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলাকে নাকি খুবই পছন্দ
ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি এদনাল্দো রদরিগেসের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আবার দুটি
সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, সদ্য নতুন চুক্তিতে সই করা কোচকে ছাড়তে রাজি হবে কি-না ম্যানসিটি।
দ্বিতীয়ত, তাকে যতটা অর্থ দিতে হবে, সেই সামর্থ্য এ মুহূর্তে নেই ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের।
ফলে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
এছাড়াও নাম ভাসছে
জার্মানিকে বিশ্বকাপ জেতানো ইওয়াখিম ল্যো ও বিখ্যাত চিলিয়ান কোচ ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনির
নামও। তবে তাদের সবার ক্ষেত্রেই বড় বাধা জাতীয়তা। ব্রাজিলিয়ানদের বাইরে ব্রাজিলের কোচ
হওয়ার ইতিহাস নেই কারোরই।