শরীরটা ভেঙে পড়েছে। তাতে কী? এ যে ভালোবাসার টান। সেই ৫০ বছর আগে শুরু। এখনো চলছে। কত ঘটনা ঘটে গেল চোখের সামনে। পাল্টে গেছে কত দৃশ্যপট। পাল্টে গেছে সেই ঢাকা। পাল্টে গেছে বুড়িগঙ্গার বহমান স্বচ্ছ পানির ধারাও। এভাবেই দীর্ঘ ৫০টি বছর পার করে ফেলেছেন শাহাব উদ্দিন।
ঢাকার সদরঘাটে নৌকা চালিয়ে সেই থেকে সংসারের ঘানি টেনে আসছেন শাহাব উদ্দিন। আগে ১০ পয়সা, এক টাকায় যাত্রী পারাপার করতেন। তবে সবকিছুর পালাবদল হয়েছে। এখন ৫-১০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী পারাপার করেন তিনি।
শুধু শাহাব উদ্দিন নন, এমন অনেক মাঝির জীবনই কাটছে সাদামাটা। তবে তাদের কেউ হাল ছাড়েননি। অল্প আয় হলেও ভালোবাসা থেকেই নৌকা চালান মাঝিরা।
সদরঘাটে লঞ্চ টার্মিনালের পাশের সবচেয়ে বড় নৌকাঘাট ‘ওয়াইজঘাট’। ওয়াইজঘাটে নদী পারাপারে ২০০-২৫০টি নৌকা চলাচল করে। এর মধ্যে ৪০-৫০টি ইঞ্জিনচালিত। বাকিগুলো বৈঠা বেয়ে চলে। তবে নিয়মিত চলে দেড়শোর মতো নৌকা। অধিকাংশ মাঝিই এসব নৌকা ভাড়া নিয়ে চালান।
রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলে। মাথাপিছু ভাড়া ১০-২০ টাকা। তবে বৈঠাচালিত অসংখ্য নৌকাও চলছে এ ঘাটে। তাতে নদী পার হতে ভাড়া লাগে ৫-১০ টাকা। যাত্রীর চাপ থাকলে দিনে ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আয় কম হয়। ২০০-৪০০ টাকা আসে কোনোমতে।
মাঝিরা জানান, ওয়াইজঘাট থেকে বৈঠাচালিত নৌকায় খাজা মার্কেট, নাগর মহল, ইস্পাহানিঘাট পর্যন্ত জনপ্রতি ৫ টাকা ভাড়া। এছাড়া আলম মার্কেট, ব্রিজঘাট পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় একই রুটে ভাড়া নেয়া হয় যথাক্রমে ১০ ও ২০ টাকা। প্রতিবার যাতায়াতে একটি নৌকায় সর্বোচ্চ পাঁচজন যাত্রী নেন মাঝিরা। কখনো কখনো একজন যাত্রী নিয়েও নদী পারাপার করতে হয় তাদের। অনেকে আবার রিজার্ভও নেন।
ওয়াইজঘাটে নৌকা চালান আল আমিন। তিনি বলেন, আগে কম টাকা ভাড়া ছিল। তবু ভালোভাবে চলতে পারতাম। এখন ভাড়া ৫-১০ টাকা হলেও চলতে কষ্ট হয়। ঘাটে অনেক নৌকা হয়েছে, মাঝিও বেড়েছে। দিনে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চালানোও দায়। সবকিছুর দামই বাড়তি। তবু এ পেশাকে ভালোবাসি৷ ইচ্ছা করলেই ছাড়তে পারি না। এজন্য কষ্ট হলেও নৌকা চালিয়ে সংসার চালাই।
নৌকার যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিদিন কাজের জন্য বুড়িগঙ্গা পারাপার হয়ে আদালতে যেতে হয়। এছাড়া নৌকায় যাত্রাও অনেক স্বস্তিদায়ক। সব মিলিয়ে ভালো লাগে৷ যে কারণে প্রতিদিন এদিক দিয়ে নৌকায় যাতায়াত করি।