যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসের নিকটস্থ অ্যালেন শহরে বাংলাদেশি একটি পরিবারের চার সদস্যকে মর্মান্তিকভাবে হত্যার পর দুই ভাইয়ের আত্মহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল ফারহান তৌহিদ। ফারহান তৌহিদ দীর্ঘদিন ধরেই বিষন্নতায় ভুগছিলেন বলে তাদের পারিবারিক ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের একটি সূত্রে জানা গেছে।
টেক্সাসের স্থানীয় সময় সোমবার (৫ এপ্রিল) সকালে দুই ভাই মিলে তাদের মা আইরিন ও বাবা তৌহিদুল ইসলামসহ নানী এবং একমাত্র বোনকে হত্যার পর নিজেরাও আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার পর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পুলিশ ৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ফারহান তৌহিদের ফেসবুকের স্ট্যাটাস পর্যালোচনা করে অ্যালেন সিটি পুলিশের সার্জেন্ট জন ফেলী জানান, সম্ভবত গত শনিবার এমন নৃশংসতার ঘটনা ঘটে। ১৯ বছর বয়সী একজনের এই পরিস্থিতির আলোকপাত করা হয়েছে। পুলিশের মতে ‘আত্মহত্যার নোটে’ রয়েছে হতাশার ধারা বিবরণী।
তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন কোনো কারণে হয়তো তৌহিদুল ইসলামের দুই পুত্রই মন মরা ভাব বা বিষন্নতায় ভুগছিলেন। আত্মহত্যার সেই নোটে ফারহান উল্লেখ করেছেন ২০১৬ সালে নবম গ্রেডে পড়া অবস্থায় সে বিষন্নতায় আক্রান্ত হয় বলে চিকিৎসকরা জানায়। এজন্য সে পরীক্ষায় বারবার ফেল করে। আজ সে নিজের শরীরে দুইবার কেটেছে। খুবই কষ্ট পেয়েছে। তার মনে আছে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট, কাঁচির মতো ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের শরীরে কেটেছিল। সে অনুভব করেছে কতটা অসহনীয় যন্ত্রণা। এরপর প্রায় দিনই শরীরে রান্নাঘরের চাকু দিয়ে কাটে। বিষন্নতার দুঃখবোধ লাঘবের পথ খুঁজেছিল সে। এ অবস্থায় তার ঘনিষ্ঠ তিন বন্ধু তাকে ত্যাগ করেছে। এমনি হতাশার মধ্যেই তাকে ভর্তি করা হয় ইউনিভার্সিটি অব অস্টিনে কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে। এরপর সে ভাবে যে, এবার জীবনটা সঠিক ট্র্যাকে উঠেছে। বাস্তবে তা ঘটেনি। বিষন্নতায় জর্জরিত হয়ে পুনরায় সে নিজের শরীর রক্তাক্ত করে এবং কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় ঘুমাতে যায়। সান্ত্বনা খোঁজে যে, সে সুস্থ হয়েছি। অন্যদের মতোই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটি সত্য বলে কখনোই মনে হয়নি তার। এক পর্যায়ে সে লিখেছে, যদি আত্মহত্যা করি তাহলে গোটা পরিবার সারাটি জীবন কষ্ট পাবে। সেটি সে চায় না। সেজন্য পরিবারের সকলকে নিয়ে মারা যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে ভাইকে শমিল করেন। দুইভাই যায় বন্দুক ক্রয় করতে। সে হত্যা করবে ছোটবোন আর নানীকে। আর তার ভাই করবে মা-বাবাকে। এরপর উভয়ে আত্মহত্যা করবে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয় তারা। কেউ থাকবে না কষ্ট পাবার।
আত্মহত্যার প্রাক্কালে লেখা ওই নোটে সে আরও উল্লেখ করেছে যে, বন্দুক ক্রয়ের ব্যাপারটি খুবই সহজ। তার ভাই গেলেন দোকানে। বললেন যে, বাড়ির নিরাপত্তার জন্যে বন্দুক দরকার। দোকানি কয়েকটি ফরম ধরিয়ে দিলেন সেখানে স্বাক্ষর করলেন ভাই। এরপর হাতে পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি, যা দিয়ে নিজের কষ্ট এবং পরিবারের কষ্ট সহজ করতে মা আইরিন ও বাবা তৌহিদুল ইসলামসহ নানী এবং একমাত্র বোনকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে নিজেরা আত্মহত্যা পথ বেছে নেয়।
তৌহিদুল ইসলামের দেশের বাড়ি পাবনা জেলার দোহার পাড়ায় বলে জানা গেছে। তিনি হায়দার পরিবার (জিয়া হায়দার ও রশিদ হায়দার)-এর নিকট আত্মীয় বলে জানা গেছে।