Logo
শিরোনাম

টিপু হত্যায় আরো যেসব নাম সন্দেহের তালিকায়

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৯ মার্চ ২০২২ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮৬৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত আরো কিছু নাম পুলিশের তালিকায় রয়েছে। এরমধ্যে হত্যা মিশন পরিচালনাকারী হিসাবে সন্দেহের শীর্ষে থাকা পেশাদার কিলার মুসার খোঁজে মরিয়া তৎপরতা চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তাকে ধরতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। মুসা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য সীমান্ত এলাকাগুলোয় তার ছবিসহ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, মুসাকে গ্রেফতার করা গেলেই আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য পুরোপুরি উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে। তার কাছ থেকেই খুনের মোটিভ সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন গোয়েন্দারা। তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে ব্যস্ত রাস্তায় অস্ত্র উঁচিয়ে টিপুকে এলোপাতাড়ি গুলি করা ভাড়াটে শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সোমবার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১৫ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে মাসুমকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ আসামির রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন। আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট শাহনাজ বেগম মনি রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিন নাকচ করে রিমান্ডের ওই আদেশ দেন। ২৬ মার্চ মাসুমকে বগুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কর্মকর্তারা তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ রাতে নিজস্ব মাইক্রোবাসে বাসায় ফেরার সময় শাজাহানপুরে ব্যস্ততম রাস্তায় আওয়ামী লীগ নেতা টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় ঘাতকের তপ্ত বুলেটে নিভে যায় পথচারী রিকশারোহী বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতির জীবনপ্রদীপ। গুলিতে আহত হন মাইক্রোবাসচালক মনির। তবে মাইক্রোবাসের পেছনের সিটে বসা টিপুর দুই বন্ধু আবুল কালাম ও মিজানুর রহমান মিরাজ অক্ষত অবস্থায় প্রাণে বেঁচে যান। এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসাবে সন্দেহভাজন ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ও তার সহযোগী নাসির নিখোঁজ রয়েছেন। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন এই দুজনই ঘটনার পরদিন থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরেকটি ইউনিটের হেফাজতে রয়েছেন। যে ইউনিটটি হত্যাকাণ্ডের পরই ঘটনাস্থল থেকে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করে ছায়া তদন্তে নামে। তদন্তকারীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ওমর ফারুক ও নাসিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। কিন্তু টেকনিক্যাল’ কারণে ওমর ফারুক ও নাসিরকে তারা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছেন না। এতে তদন্তকাজে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার সময় টিপুর মাইক্রোবাসের পেছনের সিটে থাকা মিজানুর রহমান মিরাজও সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। তাকে এরই মধ্যে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তার মোবাইল ফোনটিও হেফাজতে নিয়ে যোগাযোগের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘাতকদের সঙ্গে তার কোনোরকম যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। মিরাজ দুবাইয়ে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের আত্মীয় হওয়ায় তাকে সন্দেহের বাইরে রাখছেন না তদন্তকারীরা। যদিও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মিরাজ সম্পর্কে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তদন্তের এ পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বের শীর্ষে রেখেছেন যুবলীগ কর্মী রিজভী হাসান বাবু ওরফে বোচা বাবু হত্যা মামলার আসামিদের। কারণ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার সাজা থেকে বাঁচতে আসামিরা বারবার টিপুকে অনুরোধ করে বাদীর সঙ্গে সমঝোতা করে দিতে বলছিলেন। একই মামলায় টিপু বাদীর সঙ্গে সমঝোতা করে তার ঘনিষ্ঠ মারুফ হাসান সাগরকে রক্ষা করেন। কিন্তু অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ওমর ফারুক, মুসা, তার ভাই সালেহ ও নাসিরের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাবে পাত্তা দেননি টিপু। উলটো বাদীকে মামলা পরিচালনার খরচ দিতেন তিনি।

এতে আসামিরা ধরেই নিয়েছিলেন এই মামলায় তাদের সাজা নিশ্চিত করার পেছনে টিপুর হাত রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে এলাকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির নানা হিসাব-নিকাশকে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ হিসাবে গুরুত্বসহকারে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে টিপুর অবর্তমানে বাবু হত্যা মামলার আসামি ওমর ফারুক, মুসাদের প্রতিহিংসা মেটানোর পাশাপাশি নগদ লাভের হিসাবও রয়েছে। তা হচ্ছে-এজিবি কলোনি এলাকার ডিস, ইন্টারনেট ব্যবসার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, পরিবহণ পার্কিংয়ের চাঁদা, ফুটপাত বাণিজ্য ও এজিবি কলোনির মার্কেট বাণিজ্যে দখল প্রতিষ্ঠা। এর সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নতুন মোর্চার সঙ্গে টিপুর ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিও কেউ কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না।

এই কয়েকটি বিষয়কেই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ হিসাবে ধারণা পাওয়ার পর তা নিশ্চিত হতে চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। শুটার মাসুমকে এসব ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু মাসুম এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে মুখ খুলছে না। হত্যাকাণ্ডের জন্য চুক্তি করে এক ব্যক্তি মাসুমকে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল দেন-হত্যাকাণ্ডের পর তার কাছ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্রটি আবার ফেরত নেওয়া হয়-এমন তথ্যের মধ্যেই আটকে আছেন মাসুম। সোমবার মাসুমের আরেক বন্ধু স্থানীয় ডিস ব্যবসায়ী বাবুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া মাসুমের স্ত্রীকে ডিবিতে ডেকে তার মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞসাবাদকালে অনেকটা নির্বিকারভাবে প্রশ্নের জবাব দেন মাসুম। তবে তার স্ত্রী ছিলেন বিচলিত। তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তা বলেন, মাসুম ঠান্ডামাথার খুনি। সহজে সে মুখ খুলতে চাচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে আগেও হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। কোন থানায় কী মামলা রয়েছে, সেই পরিসংখ্যানও বের করা হচ্ছে।

এদিকে মাসুম সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে সোমবার গোড়ান এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের এক নেতার সঙ্গে মাসুমকে চলাফেরা করতে দেখা যেত। ওই নেতা এখন স্থানীয় একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও মাসুমকে দেখা যেত। মাসুমের রাজনৈতিক অঙ্গনে ওঠাবসা থাকায় টিপু হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থাকার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে মাসুমের পর হত্যা মিশন পরিচালনাকারী হিসাবে সন্দেহভাজন মুসার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা।

এখন তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। মুসার দেশত্যাগ ঠেকাতে বিমানবন্দর ও সীমান্ত পয়েন্টগুলোয় তার ছবিসহ বার্তা পাঠানো হয়েছে। ব্লু জিন্স প্যান্ট, হ্যাচেল (তাড়াহুড়ো) লেখা সাদা ফুল হাতা গেঞ্জি ও চোখে মেরুন চিকন ফ্রেমের সাদা গ্লাসের চশমা পরা মুসার একটি ছবি যুগান্তরের হাতেও এসেছে।

এছাড়া শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশের হাসান নামের যে বন্ধু মুসাকে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে দিতেন তার খোঁজ করছেন গোয়েন্দারা। শাজাহানপুর ও এজিবি কলোনি এলাকায় রহস্যমানব’ হিসাবে পরিচিত হাসানের নামে চলে ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা। অথচ প্রকাশ্যে তাকে কখনো এলাকায় দেখা যায় না। এই হাসান একসময় প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতার ক্যাডার বাহিনীর অন্যতম সদস্য হিসাবে কাজ করতেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, মাসুম ওরফে আকাশ চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার কাইশকানি গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে ঢাকার ৬০/১৫, পশ্চিম মাদারটেক এলাকায় বসবাস করতেন। হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ শুটার মাসুমকে গ্রেফতারে দেশের সব থানায় ছবিসহ তথ্য পাঠায়।

গ্রেফতারের পর তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক নিজের নাম মাসুম ওরফে আকাশ বলে জানায়। মাসুম জানান, তিনি নিজে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ১২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। এরপর অস্ত্র ঢাকায় লুকিয়ে রাখেন এবং মোবাইল ফোন ভেঙে হাতিরঝিলে ফেলে দেন। ঢাকা থেকে পালিয়ে ২৫ মার্চ রাত ১২টার দিকে খাজা হাইওয়ে মোটেলে উঠেন। এখান থেকে দিনাজপুরের হিলি বা জয়পুরহাটের কোনো সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

নিউজ ট্যাগ: টিপু হত্যা

আরও খবর

আতশবাজির আলোতে ঝলমলে রাজধানী

রবিবার ০১ জানুয়ারী ২০২৩

রসগোল্লার জন্মদিন আজ

মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর ২০২২